একটি মিষ্টি প্রেমের গল্প
“কাকা, ফুচকায় আর একটু ঝাল দাও তো”- বলেই হাপুস হুপুস করে চোখ নাক মুছে আবার ফুচকাটা মুখে পুরল উদিতা ।
“ঝাল খেতে গিয়ে নাকের জল, চোখের জল এক হচ্ছে তবু খাওয়া চাই”- বলেই উদিতাকে ভালবেসেই দু ঘা বসাল রাহুল ।
উদিতা , রাহুলের কথায় বিশেষ কান না দিয়ে খাওয়ায় মনোনিবেশ করল । খাওয়া শেষে ফাউ নিয়ে খানিক তর্ক বিতর্কও হলো, তারপর হাঁটা লাগল দুজন ।
রাহুল আর উদিতার এই হেদুয়া পার্কের পাশ দিয়ে হাঁটাটা নতুন কিছু নয়, দীর্ঘ বেশ কয়েক বছরের অভ্যাস, বহুদিন ধরেই এই রাস্তা, দোকান, পার্কের বসার বেদি, ফুচকাওয়ালা, কৃষ্ঞচূড়া গাছটা এরা সবাই ওদের চেনে । ঐ যেদিন রাহুল প্রথম উদিতার হাত ধরেছিল, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতেই, আচমকা, সেদিন উদিতার সাথে সাথে লাল কৃষ্ঞচূড়াটাও লজ্জা পেয়েছিল, রাঙা হয়েছিল উদিতার কানের লতি, গালের লালাভ আভা সেদিন রাহুলের চোখ এড়ায়নি ।
অথচ, এই রাহুল আর উদিতাই কোনদিন ভাবেনি, ওদের সম্পর্কটা এতদূর গড়াবে । শুধু ওরা না, কেউই ভাবেনি । কি করে ভাবতো? দুই মেরুর দুই মানুষ একে অপরকে এতটা ভালবাসতে পারবে কোনদিন ওরা নিজেরাই ভেবেছিল?
সেই যেবার হায়ার স্টাডিজের জন্য রাহুল অনেকটা দূরে চলে গেল, রাহুলকে প্রথমে কিছু না বললেও, নিঃশব্দে, আড়ালে কম চোখের জল ফেলেছিল উদিতা ? যা কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেনি তাই হয়েছে , বুঝতেই পারেনি রাহুলকে কখন এতটা আপন করে নিয়েছে । ওদের রাতজাগা প্রতিটি কথোপকথন, খুব চেনা কফিশপটা, কলেজের গেটটা, টিউশন ব্যাচের চক ডাস্টার ব্ল্যাকবোর্ড ওদের বেড়ে ওঠা এই প্রেমের সাক্ষী ।
আনমনে দুজনে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে এসব কথাই বারবার মনে আসছিল দুজনের ।
-“আচ্ছা, তোর মনে আছে, এই দোকানটার লস্যি তোর কত প্রিয় ছিল?”
-“হ্যাঁ, এই দ্যাখ, সেবার পুজোয় এই দোকানটাতেই খেয়েছিলাম না ? কি খারাপ ছিল বল ।।।।”
এসব বলতে বলতেই ট্রামলাইন পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে দুজন । আজ কতদিন পর আবার সেই চেনা রাস্তা, চেনা গলি, যেন অনেক না পাওয়ার মাঝে অনেকটা ফিরে পাওয়া ।
“আচ্ছা শোন, আজ তোকে কয়েকটা জরুরী কথা বলতেই এখানে ডাকা ।” রাহুলের দিকে তাকিয়েই বলল উদিতা ।
রাহুল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে উদিতা আবার বলল, দ্যাখ, অনেকগুলো বছর অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়ির সকলকে আটকে রেখেছি, এভাবে আর কতদিন? আমার বাড়ির লোকজন কিন্তু এবার সিরিয়াস আমার বিয়ে নিয়ে।।।।।” কথাটা আর শেষ করতে পারল না উদিতা ।
খুব চেনা পরিচিত ভালবাসার গল্প এটা, আমাদের সবার মতোই ।
রাহুলের বাবা রিটায়ার করেছেন আগের বছর, সরকারী কেরানি ছিলেন, বাড়ির অবস্থা নিতান্তই সাধারণ । সেই বাড়ি থেকে ঘুঁষ দিয়ে সরকারী চাকরি লাভ বা বহু টাকার বিনিময়ে পড়াশুনো কোনটাই সম্ভব নয় । সুতরাং, এই মন্দার বাজারে যা চাকরীর অবস্থা এতে এসব নতুন কিছু নয়, কত প্রেমই তো এই চাকরীর অভাবে – টাকার অভাবে জানলা দিয়ে পালায় ।
রাহুলও শুনলো শুধু চুপ করে, একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছুই শোনা গেল না, উদিতা জানে রাহুলও যথেষ্ট চেষ্টা করছে, কিন্তু তাও এখনও অবধি।।।।।
দুইপক্ষের মৌনতায় যেন অনেকগুলো কথা বলে দিচ্ছিল, যে হাতদুটো একে অপরকে সবসময় আঁকড়ে রাখতে চেয়েছিল, আজ সেই হাতদুটোই কী ক্লান্ত? কে জানে।
“তুই আমার স্বপ্ন, আমার জীবনের ইচ্ছা সবই তো জানিস।।।।।”
রাহুলের মুখের কথা কেড়ে উদিতা বলল,”জানি, সবই জানি, ইনফ্যাক্ট আমিই সবথেকে ভাল জানি, কিন্তু, বাড়িতে কী বোঝাব বল তো? রোজ রোজ কী বলে বোঝাব? কী অজুহাত দেব?”
-“অজুহাত? অজুহাতটা কীসের? সবটা বুঝিয়ে বললে তাদেরও তো বোঝা উচিত? তার জন্য রোজ অজুহাতের কথা কী করে আসছে? তাও তো আমি চেষ্টা করছি ।” এটুকু বলেই থামল রাহুল । ফিরে তাকাল উদিতার দিকে, শক্ত করে ধরে রাখা হাত টার দিকে তাকাল একবার ।
উদিতা তাকিয়ে সেই চোখগুলোর দিকে, যেগুলোর দিকে তাকিয়ে আজ এতগুলো বছর বেঁচে থাকার রসদ পেয়েছে ও । রাহুলের স্বপ্ন, ওর লেখা এগুলো তো উদিতারও স্বপ্ন ছিল, ওকে জিততে দেখাটা তো উদিতারও স্বপ্ন ছিল, কিন্তু, সমাজ আর সেই সমাজের মানুষ থুড়ি জীব-এর সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চলতে আজ উদিতারও কোথাও যেন রাহুলের জন্য অপেক্ষাটা বিরক্তিকর ঠেকছে । রাহুলের নিজের স্বপ্নকে ছোঁয়াটা আজ উদিতার কাছে কিছুটা হলেও পাগলামো ঠেকছে, যেন, ওসব পরে হবে, চাকরিটাই জরুরী, স্বপ্ন ছোঁয়া চাট্টিখানি কথা নয়, ওসব ভেবে সময় নষ্ট করে কী লাভ?
************
দিন দিন কথার ওপর কথা বাড়ছিল, তার সাথে বাড়ছিল দূরত্ব । দুই পরিবারের ইচ্ছার চাপে, ওদের মিষ্টি সতেজ নিষ্পাপ প্রেম দীর্ঘশ্বাস ফেলছিল, কী করে যেন হারিয়ে যাচ্ছিল সবটুকু, অথচ রাহুল কিছুতেই মনঃসংযোগ করতে পারছিল না, চাকরিটাও জুটছিল না, কোনদিন ১০টা -৫টা অফিসের কাজের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি, কিন্তু সবকিছু পেরিয়ে ভালবাসাটা যেন আর বেঁচে থাকছে না ।
-“দ্যাখ, আমার পক্ষে এভাবে আর সম্ভব হচ্ছে না, আমার মা বাবারও তো আমা